Friday, February 8, 2013

মহাসমাবেশ শুরু, জনতার ঢল |


কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেল তিনটায় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসমাবেশ শুরু হয়। শাহবাগসহ আশপাশের গোটা এলাকা জন সমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ সমাবেশ স্থলে জমায়েত হয়েছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে এখনও মানুষের ঢল আসছে শাহবাগের দিকে। 
মহাসমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন বাংলাদেশ ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কসহ সংগঠকেরা। এই মহাসমাবেশে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত সাধারণ মানুষও ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে যোগ দিয়েছেন এই মহাসমাবেশে। একই সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সংগঠনও এতে যোগ দেয়। 
আজ শুক্রবার ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে জড়ো হতে থাকে শাহবাগ চত্বরে। অনেকের গায়ে লাল-সবুজের পতাকা রঙ্গ পোশাক, কপালে লেখা বাংলাদেশ। বুকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি। সমাবেশ ছড়িয়ে পড়েছে শাহবাগ থেকে বাংলামোটর, রমনা পার্ক, এলিফ্যান্ট রোড ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি পর্যন্ত। সবার কণ্ঠে একই ধ্বনি: ‘কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিতে হবে, রাজাকার ও জামাত শিবিরকে না বলুন, যুদ্ধাপরাধের রায় নিয়ে আঁঁতাত ও আপোশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।’
পুরো শাহবাগ জুড়ে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হয়েছে প্রতিবাদী মানুষ। কোথাও চলছে গণসংগীত, কোথাও নাটক আবার কোথাও বা যুদ্ধাপরাধী-বিরোধী চিত্রাঙ্কন। শাহবাগ চত্বর থেকে বারডেম হাসপাতাল পর্যন্ত প্রায় ১০০ ফুট লম্বা তিনটি সাদা কাপড় বিছানো হয়েছে রাজপথে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ লিখছেন তাঁদের মনের কথা, মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার আকুলতার কথা। তাঁরা লিখছেন, ‘হয় আমাকে ফাঁসি দাও, নয়তো কাদের মোল্লাসহ সব রাজাকারকে।’ উদয়ন স্কুলের এক ছাত্র লিখেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় না শুনে বাড়ি ফিরে যাব না।’ ইস্কাটনের বাসিন্দা সাইফ তানভীর লিখেছেন, ‘কোথায় তোমার মুক্তিসেনা, কোথায় আছ তোমরা? জেগে ওঠো বাংলাদেশ।’
বেলা ১টার পর জুম্মার নামাজের বিরতি দিয়ে বেলা দুইটা থেকে আন্দোলন আবার শুরু হয়েছে। আন্দোলনের সংগঠকদের সূত্রে জানা গেছে, শাহবাগে এই অবস্থান কর্মসূচি চলবেই। যুদ্ধাপরাধের ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠা স্বতস্ফূর্ত এই আন্দোলনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হবে। তারই রুপরেখা ঘোষণা করা হবে আজকের মহাসমাবেশ থেকে। আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক বাংলাদেশ ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের মাহমুদুল হক মুনশি বলেছেন, ‘মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা কর্মসূচি শেষ করতে চাচ্ছি না, বরং আন্দোলনকে আরও বেশি ছড়িয়ে দিতে এবং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আরও কঠোর কর্মসূচি আমরা ঘোষনা করব। এই অবস্থান কর্মসূচি চলবে।’ ইতিমধ্যে সমাবেশ স্থলে দেশের বরেণ্য শিল্পী, সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তেল-গ্যাস-বিদ্যুত্ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, নাট্য-অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত, কর্মজীবি নারীর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া রফিক বেবিসহ আরও অনেকে সমাবেশস্থলে এসে সংহতি জানিয়েছেন।
রাত জাগার ক্লান্তি ধুয়ে ফেলে ভোরের আলো ফোটার পরপরই প্রতিবাদী আন্দোলনের কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন শাহবাগ চত্বর। সকাল ৯টা থেকে সেখানে শুরু হয় মানুষের ঢল। ১০টা থেকে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান ব্যানার নিয়ে শাহবাগের আকাশ-বাতাস স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে সমাবেশ স্থলে আসতে শুরু করেছেন। এসেছেন কর্মজীবী নারী, বাংলাদেশ ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান। সবার কণ্ঠে একই দাবি, যুদ্ধাপরাধমুক্ত বাংলাদেশ চাই। সবাই অপেক্ষায় আছেন বেলা তিনটার সমাবেশের মূল মঞ্চের দিকে। কী ঘোষণা আসবে সেখান থেকে।

No comments:

Post a Comment