Friday, June 7, 2013

তবে কি প্রেমে ফাটল মানতে পারেননি জিয়া!

অবসাদের জেরেই এই আত্মহত্যা। সম্প্রতি অভিনেতা আদিত্য পঞ্চোলির ছেলে সুরজ পঞ্চোলির সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরেছিল জিয়ার। তার সঙ্গে পেশাগত হতাশা মিলেমিশেই জিয়া এই চরম পথ বেছে নিলেন বলে মনে করছে পুলিশ। মঙ্গলবার সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে আদিত্য এবং সুরজকে জেরা করা হয়েছে বলে জানা যায়।
 
ময়না-তদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, জুহুর সাগর-সঙ্গীত অ্যাপার্টমেন্টে সোমবার রাত এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যে আত্মহত্যা করেন জিয়া। সে সময় তার মা রাজিয়া খান বাড়ি ছিলেন না। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখতে পেলেন, মেয়ের ঝুলন্ত দেহ। পুলিশের দাবি, আত্মহত্যার আগে রাত ১০টা ৫৩ মিনিটে জিয়া মোবাইল থেকে শেষ ফোনটি করেছিলেন সুরজকে। মিনিট দুয়েক কথা হয়েছিল। সোমবার সারা দিনই তাদের দু’জনের বেশ কয়েক বার কথা হয়, টেক্সট মেসেজ চালাচালি হয়।
 
জানা যাচ্ছে, সুরজের জীবনে নতুন প্রেমিকার অনুপ্রবেশ মেনে নিতে পারেননি জিয়া। সোমবার সুরজ তাকে একটি ফুলের তোড়া পাঠিয়েছিলেন, জিয়া গ্রহণ করেননি। তবে শুধুমাত্র সুরজের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরেই এই আত্মহত্যা কি না, নিশ্চিত নয় পুলিশ। ঘর থেকে কোনও সুইসাইড নোটও মেলেনি।
 
বলিউডে নিজের ক্যারিয়ার নিয়েও যথেষ্ট হতাশ ছিলেন জিয়া। ‘নিশব্দ’ বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি। পরের ছবি, আমির খানের সঙ্গে ‘গজনী’। নেহাতই পার্শ্বচরিত্র। এ ছবি জনপ্রিয়তার রেকর্ড গড়লেও জিয়ার জন্য আলাদা করে লাভদায়ক হয়নি। একই কথা প্রযোজ্য সাজিদ খানের ‘হাউসফুল’ সম্পর্কেও। ছবি হিট! কিন্তু জিয়া সামনের সারিতে নেই! তার পর যেন বড় পর্দা থেকে এক রকম উধাও হয়ে গেলেন জিয়া।
এসেছিলেন ‘নিশব্দে’। চলেও গেলেন নীরবে। আঠেরো বছর বয়সে প্রথম ছবি, তা-ও একেবারে অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে। জিয়া খান ছিলেন সেই বিরল সৌভাগ্যবতী।
 
২০০৭ সাল মুক্তি পেল রামগোপাল বর্মার ‘নিশব্দ’। সিনেমাটি বক্স অফিসে তেমন জনপ্রিয়তা অর্জন না করলেও, সাহসী গল্পের সাহসী নায়িকা হিসেবে নজর কাড়লেন জিয়া। হইচই ফেলে দিল অমিতাভর সঙ্গে তাঁর চুম্বনদৃশ্য।
 
রামগোপাল বর্মা বলেছেন, আর কোনও নতুন মেয়ের মধ্যে ওই প্রাণশক্তি দেখিনি, যা জিয়ার মধ্যে ছিল। অথচ সেই জিয়াই শেষের দিকে বলতেন, “আমার আশপাশের সবাই সব সময় বোঝাতে চায়, আমি সম্পূর্ণ ব্যর্থ।” গত তিন বছর তার হাতে কোনও ছবি ছিল না। এই হতাশার পরিণতিই আত্মহনন, ধারণা রামগোপালের।
 
এই রকম মৃত্যু এর আগেও বহু বার দেখেছে বলিউড। যেমন গুরু দত্ত। বলিউডের একাংশের ধারণা, স্ত্রী গীতা দত্তের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতির জেরেই আত্মঘাতী হয়েছিলেন এই পরিচালক-অভিনেতা। কিংবা পরভিন বাবি। তার রহস্যজনক মৃত্যুর পিছনে একাকীত্বকে দায়ী করেছেন অনেকে। বা অভিনেত্রী দিব্যা ভারতী। মাত্র উনিশ বছর বয়সে রহস্যজনক মৃত্যু হয় তার।
 
এ ছাড়াও রয়েছেন পরিচালক মনমোহন দেশাই, দক্ষিণের জনপ্রিয় নায়িকা সিল্ক স্মিতা, মডেল নাফিসা জোসেফ। তালিকাটা নেহাত ছোট নয়।
 
যদিও গত কিছু দিন যাবৎ জিয়া অভিনয়ে ফেরার চেষ্টা করছিলেন। বেশ কিছু চুক্তি সই করেছিলেন বলে জানা যায়। সংবাদমাধ্যমে নিজেই দাবি করেছিলেন, অভিনয়টাকে আরও ঘষামাজা করবেন বলে লন্ডনে পড়তে গিয়েছিলেন। এ বার আবার নিয়মিত কাজ করবেন। জিয়ার বদলে ‘নাফিসা’ নামটা ব্যবহার করতে চান বলেও জানিয়েছিলেন। সে সব কিছুই হল না।
 
আঠেরো থেকে পঁচিশ মাত্র সাত বছরেই ঝড়ে গেল বলিউডের আরেকটি নক্ষত্র।

No comments:

Post a Comment