নাজিম উদ্দিনের দুই হাত পিছ মোড়া করে একটা নারিকেল গাছের সাথে বাধা, মনটা কিন্চিৎ বিষন্ন, তবে তিনি ধৈর্য হারাচ্ছেন না। আল্লা পাক বিপদে ধৈর্য ধারন করতে বলেছেন। তিনি মনে মনে একটা দোয়া পড়ছেন, এই দোয়া আমল করলে মানুষ মানুষের বশে চলে আসে বিচার কার্য বিবাদীর পক্ষে হয়। গত কালকে পর্যন্ত তিনি ছিলেন বাদি, আজকে তিনি বিবাদী সবই আল্লাহতালার হাতে, বান্দার হাতে কিছু নাই। আর তার হাতে কিছু থাকারও উপায় নাই কালকে যে হাতে এল এম জি দিয়ে পাকিস্তান বিরোধি মুক্তি বিচ্ছু গুলারে মারছে, সেই হাত যেভাবে পিছ মোড়া করে বেধেছে তাতে এ যাত্রা বাচার কোন উপায় তিনি দেখছেন না। তার ঠোটের এক পাশে কিন্চিত কেটে গেছে রক্ত ঝড়ছ, তিনি তাতে বিচলিত না এটা হইলো বীরের রক্ত। নজরুলের একটা কবিতা আছে না, "বল বির চির উন্নত", লাহওলা ওলা কুয়াতা এগুলা সে কি ভাবতে ছে, নাস্তিকের কবিতা মুখে আনতেছে। তার আশে পাশে গিজ গিজ করছে সব ইন্ডিয়ার দালাল কাফেরের দল। মুক্তি বাহীনি! আরে পাকিস্তান হইল পুন্য ভুমি সেই পুন্য ভুমি ছাইড়া তোরা গেলি রাম, রাম করতে, হিন্দুস্হানীগো লগে হাত মিলাইয়া মালাউন গো কাছ থেইকা ট্রেনিং নিয়া নিজের পাকিস্তানী ভাই গো বুকে গুলি চালাইলি। নবী করিম তোগো সাফায়াত দিবনারে মালাউনের দোস্ত। তোরা হইলি শয়তানের ভাই, না না তোরা সাক্ষাত শয়তান।
খান সাহেবের কথা না শুইন্না তোরা লাফাইলি শেকের ব্যাটার কথায়। আরে বাবারে ভারত তো চাইবোনা পাকিস্তান এক থাকুক ওরা চাইছিলো একটা ভাংয়ন আর তোরা হেই ফাদেই পারা দিলি। আমরা মুসলিমলীগ হইলাম আসল দেশ প্রেমীক, পাকিস্তান আমাগো দেশ। এই দেশ ভাংতে দিমু কোন কারনে?! ভারতের দালাল হইলি তোরা। আরে ছাগল বিচ্ছুর দল "দেশ প্রেম ঈমানের অংশ' তোরা হেইডাও বুঝলিনা। মালাউনের দেশে গিয়া ঘুইরা আসছোস তোগো আবার ঈমান। জেনারেলরে কইলাম খান সাহেব "এক গুলী মুঝকো ভি ডালদো।" উনি শুনলনা। এই বিচ্ছু গো হাতে ধরা খাওয়ার চাইতে পাকিস্তানের পাক বন্দুকরে গুলিতে মরা ঢের ভালো আছিল।
খান সাহেবেরে বিচ্ছু গুলায় মাইরা পশ্চাদ দেশে বাস দিয়া খারা কইরা রাখছে গলির মোড়ে। আমার কপালেও মনেহয় একই টাইপের কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। খান সাহেবের একটু আলু ঘটিত সমস্যা আছে যার কারনেই কান্যা আর বিবিকে তার বাবা বাড়ি পাঠাইয়া দিছি। অত দুর দেশ থেইকা আইছে খানেরা একটু পিয়াস তো লাগবোই। আর হিন্দুগো বৌ বেটী তো গনিমতের মাল, এই মাল একটু ধরলে টরলে দোষের কিছু নাই।
খান সেনারা হইলো আল্লার রাস্তায় যুদ্ধ কারী, হেগোরে খেদ মত না করলে ঈমান ঠিক থাকে কেমনে? আর এই বিচ্ছু গুলায় কয় আমরা নাকি দেশের মা বৈন গো নিয়া ভাগ বাটোয়ারা করছি খানেগো কাছে। করলে করছি, মালাউনের লইগা একেরে দরদ উথলাইয়া উঠছে। মনে নাই দেশ ভাগের সময়। কাইট্টা টুকরা টুকরা করছিলো মুসলমান গো ঐ পারে। তহন মালাউন গো তো দেহিনাই মুসলমান গো লইগা এতো পিরিত দেখাইতে এই কথা বলায় এক বিচ্ছু মুক্তি বাহীনির পোলা তার বাম চোখে ঘুষি দিয়া ফুলাইয়া ফালাইছে। সেই চোখে এখন সে কিছুই দেখতে পারছেনা, তবু সে তার ডান চোখ দিয়ে তার স্ত্রী আর অষ্টাদশি কন্য কুলসুম বিবি কে খুজছে। মেয়ে টা যদি দেখে তার পিতা কে গাছের সাথে এই ভাবে পিছ মোড়া করে বেধে রেখেছে, কষ্টে মেয়েটা আধ মরা হয়ে যাবে। যুদ্ধ শেষ হয়ে ছে কালকে পাকিস্তান বেতারে কয় "হাতিয়ার ডাল দে"। তখনি সে বুঝতে পারছিলো পাকিস্তানের দিন শেষ। বিচ্ছু গুলায় খাইয়া না খাইয়া যুদ্ধ টা জিতা নিলো। কিন্তু কেমনে? সেইটা ভেবে তিনি কিছুটা অবাক হন। তবে তিনি বড়ই আবেগী হয়ে ওঠেন পাকিস্তানের কথা মনে পরাতে, মুক্তি গুলা বুঝলনা কারা আপন কারা পর, আফসোস বড়ই আফসোস বলে তিনি জিভ দিয়ে চুক চুক টাইপের একটা শব্দ করে।
কমান্ডার মকবুল তার বিশাল এক যোদ্ধা বাহীনি নিয়ে এই এলাকা দখল করে নিয়েছেন। পাশের গ্রামে এখনও অপারেশন চলছে, সেখানে হানাদারেরা একটা স্কুল ঘরে ক্যাম্প বানিয়ে ছিলো সেখানেই মুল যুদ্ধটা চলছে মুক্তি বাহীনি ক্যাম্প দখল করতে পারছেনা, কিছু সংখ্যক মহিলা কে ওরা সেখানে মানব ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করছে। এর মধ্যে কিছু মহিলাকে তারা গত কাল রাতে ধরে নিয়ে গেছে। সেই অপারেশনের দ্বায়িত্বে আছে "রফিক" দুর্দান্ত ছেলে মকবুলকে একবার হানাদারা মেরে ফেলেছিল প্রায়, সেখান থেকে এই রফিকই তাকে বাচিয়ে দিয়ে ছিল। রফিক, মকবুল কমান্ডার কে জানিয়েছে অনেক নারী থাকায় তারা ক্যাম্পের পাশে যেতে পারছেনা, তবে একটা করা যায় গ্রেনেড মেরে পুর ক্যাম্প উড়িয়ে দেয়া, কিন্তু তাহলে ঐ সব অসহায় নারী দের কি হবে?
এর মধ্যে এক নারী কে সম্পূর্ন নগ্ন করে মুক্তি যোদ্ধা দের দিকে ছেড়ে দিয়েছিলো হানাদাররা, মেয়েটা নিরাপদ জায়গায় পৌছানোর আগে হানাদাররা পিছন দিয়ে গুলি করে মেরে ফেলেছে মেয়েটাকে। রফিকের মেয়েটাকে কিছুটা চেনা লেগেছিল কিন্তু গোলাগুলিতে ঠিক বুঝতে পারেনি কে হতে পারে।
গোলাগুলিরে এক পর্যায়ে হানাদার দের বারুদের ঘরে আগুন লেগে গেছে ওরা সারেন্ডার করতে রাজী হয়ে ছে। রফিক তখন সেই গুলি খাওয়া মেয়েটার দিকে ছুটে গিয়ে তার গায়ের চাদরটা দিয়ে ঢেকে দেয় লাশ টাকে। তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে এক ফোটা অশ্রু যেটা চিক চিক করতে থাকে স্বাধীনতার উজ্জল হীরার মতন।
রফিক মেয়েটার লাশ কোলে নিয়ে আসে মকবুলের কাছে। মকবুল লাশ টার মুখের দিকে দেখে তিনি কিছু না বলে রফিকের কাধের উপর হাত রাখেন। রফিক কাদেনা। লাশটা নিয়ে রাখে রাজাকার কমান্ডার নাজিম উদ্দিনের সামনে। নাজিম উদ্দিন লাশটার মুখ দেখে চিৎকার দিয়ে কেদে ওঠে। "না এ হতে পারেনা এটা সম্ভব না কে করল এই কাজ?" ভিড়ের মধ্য দিয়ে নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী বেড়িয়ে আসে প্রচন্ড রাগ নিয়ে বলেন তোমার সাধের খান সেনারা করছে এই কাজ। তারা তোমার কন্যাকেও রেহাই দেয় নাই। তারা আমাগোর বন্ধু কোন কালে ছিলোনা, হয় ও নাই আর হবেও না। তুমি বুঝতে চাওনাই। এখন সামলাও এই গনিমতের মাল। বলে উনি ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যান।
মকবুল কমান্ডার এসে রফিকের সামনে দ্বাড়ায়। বলে, রফিক তোমার ভাইয়ের এখন কি করব? অন্য রাজাকার দের সব মেরে ফেলেছি। ওনাকে রেখে দিয়েছি তোমার জন্য। তোমার ভাই তুমি আমাদের সহযোদ্বা সিধ্বান্তটা তুমিই দাও বলে একটা এল এম জি রফিকের হাতে তুলে দেয়। রফিক তার ভাই নাজিম উদ্দিনের দিকে এল এম জি তাক করে, নাজিম উদ্দিন চোখ বন্ধ করে আছে। তার চোখ ভরা পানি কিন্তু তিনি এই পানি কাউকে দেখা তে পারছেন না, তার নিজের প্রতি নিজের ঘেন্যা হচ্ছে তিনি এ কি করলেন? এ কোন ভুল পথে হাটলেন তিনি? তার মনে আছে যেদিন তার এই ছোট ভাই রফিক বাড়ি থেকে নিরুউদ্দেশ হয় সেদিন তিনি তাকে বলে ছিলেন সঠিক পথে চল। বিকেলে পাকিস্তানীদের ক্যাম্পে এসে রাজাকারীতে নাম লেখাও। ও লেখালো না পালিয়ে গিয়ে মুক্তি বাহীনিতে নাম দিল। এখন তিনি দেখছেন রফিকই ঠিক ছিল উনি যা ভেবে ছিলেন সবই ভুল। হানাদার দের ক্যাম্পে একবার এক মুক্তি বিচ্ছু তাকে জিগ্যেস করে ছিল "এতই যদি আপনারা বলেন ভারতের ইন্দনে এই যুদ্ব। ভারত এই যুদ্ব লাগিয়ে দিয়েছিল তাহলে জবাব দেবেন কি ২৫শে মার্চ রাতের হত্যা জগ্য কারা করেছিল? এখন কি বলেন ভারত বলেছিল পাকিস্তানী আর্মি কে যে তুমি যাও নিরীহ ঘুমানো মানুষ গুলো কে হত্যা কর। সেই মুক্তি ছেলেটাকে মেরে ফেলে ছিল খান সাহেব। তবে তার মনে প্রশ্নটা দাগ কেটে ছিল, কিন্তু সেই অস্হির সময়ে মাথা ঠিক থাকার কোন উপায় ছিল না। আফসোস একবার যদি এই ভুল সুধরাবার সময় পেত। তা মনে হয় আর হবেনা।
রফিক এল এম জি র ট্টিগারের উপর আংগুল রাখে। তার মৃত মায়ের মুখটা ভেষে উঠে তার সামনে, মৃত্যুর সময় তার মা বলে ছিল" বড় ভাই কে পিতা তুল্য সম্মান করবি, ওনার বিপদে আপদে পাশে থাকবি। তুই জীবিত থাকতে ওর যাতে কোন ক্ষতি না হয়।" রফিক ট্রিগার থেকে আংগুলটা সরিয়ে নেয়। এল এম জি টা কমান্ডার সাহেবের কাছে দিয়ে তার ভাই আর ভাতিজি কে ধরে কাদতে থাকে। আর বলে ভাই জান আমি পারুম না তোমার বুকে গুলি করতে, আমি পারুম না।
মকবুল কমান্ডার নিজেই বন্দুকের নল তাগ করে নাজিম উদ্দিনের দিকে। রফিক কিছুটা ক্ষেপে যায়। বলে আমি বাইচা থাকতে আমার ভাইয়ের গায়ে কেউ ফুলের টোকা দিলে সে জান নিয়া বাইচা যাইতে পারবোনা বলে পাশে দাড়িয়ে থাকা এক যোধ্বার হাত থেকে থ্রি নট থ্রিটা কেড়ে নিয়ে মকবুলের দিকে তাক করে।
পরিশিষ্ঠঃ
যুদ্ব শেষ হয়েছে বহু দিন, শেখ মুজিব মারা গেছে, চার নেতা মারা গেছে, জিয়াউর রহমান মারা গেছএ নুরহোসেন ও নাই কিন্তু আমার পরিবারে যুদ্ধ থামেনি এখনও, বড় চাচী কথা বলেন না বড় চাচার সাথে আজ ৪১ বছর। আমরা কেউ বড় চাচার পরিচয় বলিনা মানুষের কাছে। বড় চাচার ঘড়ে এখনও একটা জিন্নার ছবি আছে, উনি রোজ সকালে উঠে জিন্নার মুখে থুতু দিয়ে কুলসুম আপার কবর জিয়ারত করতে যান। সেখানে গিয়ে বলেন মাগো আমারে তুই মাফ করিস, মা আর তোর সাথে যদি ঐ সময়ের দুখি নারী গুলার লগে দেখা হয় তাগোরে বলিস আমারে যেন ক্ষমা করে "মা"।
আমার যে কজন বন্ধু বান্দব যানে আমার চাচা রাজাকার তারা যেন কেমন চোখে তাকায় আমার দিকে। অথচ সবাই ভুলে গেছে আমি মুক্তি যোদ্বার সন্তান, আমার বাবা রফিকুল ইসলাম মুক্তি যোদ্বার সার্টিফিকেট নেয়নি ঠিই কিন্তু উনি তো দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে ছিলেন । আমার চাচাতো বোন, পায়নি বীর অংগনা বা শহীদের মর্যাদা। আমার বাবা কি সেদিন আমার চাচা কে বাচিয়ে নিজেও রাজাকারের দলে নাম লিখিয়েছিলেন? নাকি ওটা ঐ সময়ের দাবি ছিলো। এ কোন বন্ধনের জীবন দিয়ে যাচ্ছি আমরা? আমার বাবা যদি আমার চাচাকে তখন বাচিয়ে রাজাকের দলে নাম লিখিয়ে থাকেন তাহলে আমি সেই রাজাকারেরই সন্তান বলছি।
মুখ বন্ধঃ গল্প টা আমার পরিচিত এক দাদীর জীবন থেকে কিনচিৎ নেয়া।
তবে অধিকাংশ অংশই আমার কল্পনায় বানানো। আমার এই গল্প টি আমি সেই সব বীর অংগনা দের কে উৎসর্গ করছি, যা দের যুদ্বের পরে যায়গা হয়ে ছিল নিষিদ্ব পল্লীর কোন এক নির্জন কোঠায়। এই সমজ তাদের কে তাদের প্রাপ্য সঠিক সম্মান টুকুও দিতে কুন্ঠা করেছিল। আমার সেই সকল মা কে শ্রধ্বা ভরে লেখাটা উৎসর্গ করলাম।
আর একটি শেষ কথা, লেখাটি সবার শেয়ার দেবার অধিকার আছে।
খান সাহেবের কথা না শুইন্না তোরা লাফাইলি শেকের ব্যাটার কথায়। আরে বাবারে ভারত তো চাইবোনা পাকিস্তান এক থাকুক ওরা চাইছিলো একটা ভাংয়ন আর তোরা হেই ফাদেই পারা দিলি। আমরা মুসলিমলীগ হইলাম আসল দেশ প্রেমীক, পাকিস্তান আমাগো দেশ। এই দেশ ভাংতে দিমু কোন কারনে?! ভারতের দালাল হইলি তোরা। আরে ছাগল বিচ্ছুর দল "দেশ প্রেম ঈমানের অংশ' তোরা হেইডাও বুঝলিনা। মালাউনের দেশে গিয়া ঘুইরা আসছোস তোগো আবার ঈমান। জেনারেলরে কইলাম খান সাহেব "এক গুলী মুঝকো ভি ডালদো।" উনি শুনলনা। এই বিচ্ছু গো হাতে ধরা খাওয়ার চাইতে পাকিস্তানের পাক বন্দুকরে গুলিতে মরা ঢের ভালো আছিল।
খান সাহেবেরে বিচ্ছু গুলায় মাইরা পশ্চাদ দেশে বাস দিয়া খারা কইরা রাখছে গলির মোড়ে। আমার কপালেও মনেহয় একই টাইপের কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। খান সাহেবের একটু আলু ঘটিত সমস্যা আছে যার কারনেই কান্যা আর বিবিকে তার বাবা বাড়ি পাঠাইয়া দিছি। অত দুর দেশ থেইকা আইছে খানেরা একটু পিয়াস তো লাগবোই। আর হিন্দুগো বৌ বেটী তো গনিমতের মাল, এই মাল একটু ধরলে টরলে দোষের কিছু নাই।
খান সেনারা হইলো আল্লার রাস্তায় যুদ্ধ কারী, হেগোরে খেদ মত না করলে ঈমান ঠিক থাকে কেমনে? আর এই বিচ্ছু গুলায় কয় আমরা নাকি দেশের মা বৈন গো নিয়া ভাগ বাটোয়ারা করছি খানেগো কাছে। করলে করছি, মালাউনের লইগা একেরে দরদ উথলাইয়া উঠছে। মনে নাই দেশ ভাগের সময়। কাইট্টা টুকরা টুকরা করছিলো মুসলমান গো ঐ পারে। তহন মালাউন গো তো দেহিনাই মুসলমান গো লইগা এতো পিরিত দেখাইতে এই কথা বলায় এক বিচ্ছু মুক্তি বাহীনির পোলা তার বাম চোখে ঘুষি দিয়া ফুলাইয়া ফালাইছে। সেই চোখে এখন সে কিছুই দেখতে পারছেনা, তবু সে তার ডান চোখ দিয়ে তার স্ত্রী আর অষ্টাদশি কন্য কুলসুম বিবি কে খুজছে। মেয়ে টা যদি দেখে তার পিতা কে গাছের সাথে এই ভাবে পিছ মোড়া করে বেধে রেখেছে, কষ্টে মেয়েটা আধ মরা হয়ে যাবে। যুদ্ধ শেষ হয়ে ছে কালকে পাকিস্তান বেতারে কয় "হাতিয়ার ডাল দে"। তখনি সে বুঝতে পারছিলো পাকিস্তানের দিন শেষ। বিচ্ছু গুলায় খাইয়া না খাইয়া যুদ্ধ টা জিতা নিলো। কিন্তু কেমনে? সেইটা ভেবে তিনি কিছুটা অবাক হন। তবে তিনি বড়ই আবেগী হয়ে ওঠেন পাকিস্তানের কথা মনে পরাতে, মুক্তি গুলা বুঝলনা কারা আপন কারা পর, আফসোস বড়ই আফসোস বলে তিনি জিভ দিয়ে চুক চুক টাইপের একটা শব্দ করে।
কমান্ডার মকবুল তার বিশাল এক যোদ্ধা বাহীনি নিয়ে এই এলাকা দখল করে নিয়েছেন। পাশের গ্রামে এখনও অপারেশন চলছে, সেখানে হানাদারেরা একটা স্কুল ঘরে ক্যাম্প বানিয়ে ছিলো সেখানেই মুল যুদ্ধটা চলছে মুক্তি বাহীনি ক্যাম্প দখল করতে পারছেনা, কিছু সংখ্যক মহিলা কে ওরা সেখানে মানব ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করছে। এর মধ্যে কিছু মহিলাকে তারা গত কাল রাতে ধরে নিয়ে গেছে। সেই অপারেশনের দ্বায়িত্বে আছে "রফিক" দুর্দান্ত ছেলে মকবুলকে একবার হানাদারা মেরে ফেলেছিল প্রায়, সেখান থেকে এই রফিকই তাকে বাচিয়ে দিয়ে ছিল। রফিক, মকবুল কমান্ডার কে জানিয়েছে অনেক নারী থাকায় তারা ক্যাম্পের পাশে যেতে পারছেনা, তবে একটা করা যায় গ্রেনেড মেরে পুর ক্যাম্প উড়িয়ে দেয়া, কিন্তু তাহলে ঐ সব অসহায় নারী দের কি হবে?
এর মধ্যে এক নারী কে সম্পূর্ন নগ্ন করে মুক্তি যোদ্ধা দের দিকে ছেড়ে দিয়েছিলো হানাদাররা, মেয়েটা নিরাপদ জায়গায় পৌছানোর আগে হানাদাররা পিছন দিয়ে গুলি করে মেরে ফেলেছে মেয়েটাকে। রফিকের মেয়েটাকে কিছুটা চেনা লেগেছিল কিন্তু গোলাগুলিতে ঠিক বুঝতে পারেনি কে হতে পারে।
গোলাগুলিরে এক পর্যায়ে হানাদার দের বারুদের ঘরে আগুন লেগে গেছে ওরা সারেন্ডার করতে রাজী হয়ে ছে। রফিক তখন সেই গুলি খাওয়া মেয়েটার দিকে ছুটে গিয়ে তার গায়ের চাদরটা দিয়ে ঢেকে দেয় লাশ টাকে। তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে এক ফোটা অশ্রু যেটা চিক চিক করতে থাকে স্বাধীনতার উজ্জল হীরার মতন।
রফিক মেয়েটার লাশ কোলে নিয়ে আসে মকবুলের কাছে। মকবুল লাশ টার মুখের দিকে দেখে তিনি কিছু না বলে রফিকের কাধের উপর হাত রাখেন। রফিক কাদেনা। লাশটা নিয়ে রাখে রাজাকার কমান্ডার নাজিম উদ্দিনের সামনে। নাজিম উদ্দিন লাশটার মুখ দেখে চিৎকার দিয়ে কেদে ওঠে। "না এ হতে পারেনা এটা সম্ভব না কে করল এই কাজ?" ভিড়ের মধ্য দিয়ে নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী বেড়িয়ে আসে প্রচন্ড রাগ নিয়ে বলেন তোমার সাধের খান সেনারা করছে এই কাজ। তারা তোমার কন্যাকেও রেহাই দেয় নাই। তারা আমাগোর বন্ধু কোন কালে ছিলোনা, হয় ও নাই আর হবেও না। তুমি বুঝতে চাওনাই। এখন সামলাও এই গনিমতের মাল। বলে উনি ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যান।
মকবুল কমান্ডার এসে রফিকের সামনে দ্বাড়ায়। বলে, রফিক তোমার ভাইয়ের এখন কি করব? অন্য রাজাকার দের সব মেরে ফেলেছি। ওনাকে রেখে দিয়েছি তোমার জন্য। তোমার ভাই তুমি আমাদের সহযোদ্বা সিধ্বান্তটা তুমিই দাও বলে একটা এল এম জি রফিকের হাতে তুলে দেয়। রফিক তার ভাই নাজিম উদ্দিনের দিকে এল এম জি তাক করে, নাজিম উদ্দিন চোখ বন্ধ করে আছে। তার চোখ ভরা পানি কিন্তু তিনি এই পানি কাউকে দেখা তে পারছেন না, তার নিজের প্রতি নিজের ঘেন্যা হচ্ছে তিনি এ কি করলেন? এ কোন ভুল পথে হাটলেন তিনি? তার মনে আছে যেদিন তার এই ছোট ভাই রফিক বাড়ি থেকে নিরুউদ্দেশ হয় সেদিন তিনি তাকে বলে ছিলেন সঠিক পথে চল। বিকেলে পাকিস্তানীদের ক্যাম্পে এসে রাজাকারীতে নাম লেখাও। ও লেখালো না পালিয়ে গিয়ে মুক্তি বাহীনিতে নাম দিল। এখন তিনি দেখছেন রফিকই ঠিক ছিল উনি যা ভেবে ছিলেন সবই ভুল। হানাদার দের ক্যাম্পে একবার এক মুক্তি বিচ্ছু তাকে জিগ্যেস করে ছিল "এতই যদি আপনারা বলেন ভারতের ইন্দনে এই যুদ্ব। ভারত এই যুদ্ব লাগিয়ে দিয়েছিল তাহলে জবাব দেবেন কি ২৫শে মার্চ রাতের হত্যা জগ্য কারা করেছিল? এখন কি বলেন ভারত বলেছিল পাকিস্তানী আর্মি কে যে তুমি যাও নিরীহ ঘুমানো মানুষ গুলো কে হত্যা কর। সেই মুক্তি ছেলেটাকে মেরে ফেলে ছিল খান সাহেব। তবে তার মনে প্রশ্নটা দাগ কেটে ছিল, কিন্তু সেই অস্হির সময়ে মাথা ঠিক থাকার কোন উপায় ছিল না। আফসোস একবার যদি এই ভুল সুধরাবার সময় পেত। তা মনে হয় আর হবেনা।
রফিক এল এম জি র ট্টিগারের উপর আংগুল রাখে। তার মৃত মায়ের মুখটা ভেষে উঠে তার সামনে, মৃত্যুর সময় তার মা বলে ছিল" বড় ভাই কে পিতা তুল্য সম্মান করবি, ওনার বিপদে আপদে পাশে থাকবি। তুই জীবিত থাকতে ওর যাতে কোন ক্ষতি না হয়।" রফিক ট্রিগার থেকে আংগুলটা সরিয়ে নেয়। এল এম জি টা কমান্ডার সাহেবের কাছে দিয়ে তার ভাই আর ভাতিজি কে ধরে কাদতে থাকে। আর বলে ভাই জান আমি পারুম না তোমার বুকে গুলি করতে, আমি পারুম না।
মকবুল কমান্ডার নিজেই বন্দুকের নল তাগ করে নাজিম উদ্দিনের দিকে। রফিক কিছুটা ক্ষেপে যায়। বলে আমি বাইচা থাকতে আমার ভাইয়ের গায়ে কেউ ফুলের টোকা দিলে সে জান নিয়া বাইচা যাইতে পারবোনা বলে পাশে দাড়িয়ে থাকা এক যোধ্বার হাত থেকে থ্রি নট থ্রিটা কেড়ে নিয়ে মকবুলের দিকে তাক করে।
পরিশিষ্ঠঃ
যুদ্ব শেষ হয়েছে বহু দিন, শেখ মুজিব মারা গেছে, চার নেতা মারা গেছে, জিয়াউর রহমান মারা গেছএ নুরহোসেন ও নাই কিন্তু আমার পরিবারে যুদ্ধ থামেনি এখনও, বড় চাচী কথা বলেন না বড় চাচার সাথে আজ ৪১ বছর। আমরা কেউ বড় চাচার পরিচয় বলিনা মানুষের কাছে। বড় চাচার ঘড়ে এখনও একটা জিন্নার ছবি আছে, উনি রোজ সকালে উঠে জিন্নার মুখে থুতু দিয়ে কুলসুম আপার কবর জিয়ারত করতে যান। সেখানে গিয়ে বলেন মাগো আমারে তুই মাফ করিস, মা আর তোর সাথে যদি ঐ সময়ের দুখি নারী গুলার লগে দেখা হয় তাগোরে বলিস আমারে যেন ক্ষমা করে "মা"।
আমার যে কজন বন্ধু বান্দব যানে আমার চাচা রাজাকার তারা যেন কেমন চোখে তাকায় আমার দিকে। অথচ সবাই ভুলে গেছে আমি মুক্তি যোদ্বার সন্তান, আমার বাবা রফিকুল ইসলাম মুক্তি যোদ্বার সার্টিফিকেট নেয়নি ঠিই কিন্তু উনি তো দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে ছিলেন । আমার চাচাতো বোন, পায়নি বীর অংগনা বা শহীদের মর্যাদা। আমার বাবা কি সেদিন আমার চাচা কে বাচিয়ে নিজেও রাজাকারের দলে নাম লিখিয়েছিলেন? নাকি ওটা ঐ সময়ের দাবি ছিলো। এ কোন বন্ধনের জীবন দিয়ে যাচ্ছি আমরা? আমার বাবা যদি আমার চাচাকে তখন বাচিয়ে রাজাকের দলে নাম লিখিয়ে থাকেন তাহলে আমি সেই রাজাকারেরই সন্তান বলছি।
মুখ বন্ধঃ গল্প টা আমার পরিচিত এক দাদীর জীবন থেকে কিনচিৎ নেয়া।
তবে অধিকাংশ অংশই আমার কল্পনায় বানানো। আমার এই গল্প টি আমি সেই সব বীর অংগনা দের কে উৎসর্গ করছি, যা দের যুদ্বের পরে যায়গা হয়ে ছিল নিষিদ্ব পল্লীর কোন এক নির্জন কোঠায়। এই সমজ তাদের কে তাদের প্রাপ্য সঠিক সম্মান টুকুও দিতে কুন্ঠা করেছিল। আমার সেই সকল মা কে শ্রধ্বা ভরে লেখাটা উৎসর্গ করলাম।
আর একটি শেষ কথা, লেখাটি সবার শেয়ার দেবার অধিকার আছে।
No comments:
Post a Comment