Saturday, January 5, 2013

আমাদের ডিজেরা \=-


‘ডিজে মানে ডিস্ক জকি। আমাদের কারবারটা আসলে গান নিয়ে। অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি জনপ্রিয় সব গানের তালে মানুষকে দুলিয়ে তোলাই আমাদের আসল কাজ। একটি গান চালু করে এর সঙ্গে সাউন্ডের গিয়ার উঠিয়ে-নামিয়ে কাজটি করে থাকি আমরা।’ বলছিলেন হালের জনপ্রিয় ডিজে রাহাত। তাঁর সঙ্গে যখন কথা হয়, ঠিক এর আগের রাতে বর্ষবরণে থাকা মানুষ ডিজের সংগীতের আবহে কাটিয়েছে সারা রাত। তাই রাতভর অন্যদের আনন্দ দিয়ে দিনের বেলায় যেন খানিকটা ক্লান্ত ডিজে তারকারা।
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আনন্দ আয়োজন থাকে সবখানে। শহরজুড়ে এটা পায় ভিন্ন মাত্রা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এখন যেকোনো অনুষ্ঠান পরিপূর্ণ করতেই থাকে ডিস্ক জকি বা ডিজের আয়োজন। রাজধানীতে থার্টিফার্স্ব নাইটের আয়োজন হবে আর ডিজে থাকবে না, তা যেন ভাবাই যায় না এই সময়ে।
বাংলাদেশে ডিজে ধারণাটি মোটামুটি আশির দশক থেকে বিকশিত হলেও হালের কয়েক বছরে এটি পেয়েছে বিপুল জনপ্রিয়তা। বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে যেকোনো বিশেষ দিবস, করপোরেট পার্টি, জন্মদিনের অনুষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের অনুষ্ঠান—কোনোখানেই বাদ যায় না ডিজে। এখন থ্রিজি বা ফোরজির যুগ, তাই মেলানো যাবে না শুরুর দিককার ডিজেদের সঙ্গে। অপু মাহফুজকে এখন সবাই চেনেন চ্যানেল আইয়ের উপস্থাপক বা সংবাদপাঠক হিসেবে। এই অপু মাহফুজ একসময় ছিলেন ডিজে।
তিনি ডিজে হিসেবে কাজ করেছেন ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় এক যুগ ধরে। কেমন ছিল তাঁদের সময়ে বাংলাদেশের ডিজে? জানাতে গিয়ে তিনি ফিরে গেলেন সেই ২০ বছর আগে, ‘আমার ডিজে পেশায় আসা ছিল অনেকটা শখের বশে। আমাদেরও আগে ডিজে হিসেবে ডিউক, তানিম, সাহেদ, তারেক ও স্বপন ভাইদের দেখেই এই পেশায় আসা। সেই সময়ও তাঁরা ভালো গান বাজাতেন। আমরা আসলে তাঁদের পরের প্রজন্ম। সে সময়ে কোনো বড় বিয়ের অনুষ্ঠানে আমাদের বলা হতো গ্র্যান্ড বল।’ সে সময় সব ধরনের গান খুঁজে পাওয়াও ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ। জানান অপু মাহফুজ। বলেন, ‘বাইরের জনপ্রিয় গানগুলো পেতে কেউ বিদেশে যাচ্ছে কি না, খোঁজ রাখতাম। ক্যাসেটের বড় বড় দোকানে ধরনা দিতাম। শুরুতে ক্যাসেট ব্যবহার করতাম। এরপর সিডিতে কিছুদিন গান বাজানোর সুযোগ পেয়েছি। আর এখনকার ডিজেরা তো হিট গানগুলোর সন্ধান পাচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে। তাই এই মাধ্যমে এখন বেড়েছে কাজ করার সুযোগ।’
একজন ডিজের প্রায় সারা বছরই থাকে ব্যস্ততা। ডিজেদের কাজ অধিকাংশ সময়ই রাতে হয়। তার পরও ডিজে হিসেবে ঢাকায় এখন অনেক মেয়েই কাজ করছেন। মেয়েদের মধ্যে প্রথম দিককার দুজন তৃষা ও সনিকা। দুজনই কাজ করছেন ২০০৬ সাল থেকে। তাঁরা এখন পার করছেন ব্যস্ত সময়। থার্টিফার্স্ব নাইটে একাধিক শো করেছেন দুজনেই। সনিকা বলেন, ‘ডিজে রাহাতের স্কুল “গ্যারেজ” থেকে যাত্রা শুরু। এরপর ডিজে বিষয়ে ভারত ও থাইল্যান্ডে শিখেছি। ভালো লাগে তখন, যখন একটা নতুন গান নিজের মেধা দিয়ে বাজাই আর অন্যরা মজা পায়।’
তৃষা নাচ করতেন প্রায় ছোটবেলা থেকে। এরপর র‌্যাম্প মডেলিং করছেন। ডিজে হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। করছেন অভিনয়ও। তৃষা বলেন, ‘শুরুতে আমাকে দেখে অনেকে মনে করত, অনুষ্ঠানে আমি হয়তো নাচব, নাহলে গান গাইব। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমি আসলে তখন নাচাতাম।’
অন্যদিকে ডিজে হূদয় মনে করেন, যেহেতু খুব সহজেই ডিজে হওয়া যায়, তাই অনেকেই এখন এই পেশায় ঝুঁকছে। তারকা হয়ে উঠছে রাতারাতি। তবে যারা এই পেশায় আসতে চায়, তাদের অবশ্যই সংগীতের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। অনুষ্ঠানের ধরন বুঝে গান বাজাতে হবে। তা ছাড়া গিয়ার আপের সময় অবশ্যই ভালো সেন্স থাকা জরুরি। এখন ডিজে হওয়ার জন্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, সেখান থেকে শিখে এলে ভালো। ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন বাইরের ডিজেদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে দেশি ডিজেদের। ফলে নিজের দেশের গানগুলোও তাঁদের সঙ্গে আদান-প্রদান করতে পারছেন তাঁরা সহজে।

No comments:

Post a Comment