Saturday, May 11, 2013

রেশমার মিরাকল এবং মুন্নী সাহার সস্তা সাংবাদিকতা


রেশমা বেচে গেল এই যাত্রায়! ১৭ তম দিনে এই বেচে থাকা খোদার কোন বিরল দৃষ্টান্ত ছাড়া আর কিছু না। সতেরতম দিনে জীবিত! আমার মনে হয় গত বছরখানেকে এর চাইতে ভাল কোন খবর কোথাও দেখিনি। মানুষের জীবনের আকাঙ্খা কত প্রবল হতে পারে, বেচে থাকার ইচ্ছা মানুষকে অসাধ্য সাধন করাতে পারে আর খোদার অপূবর্ মিরাকল তো আছেই!
রেশমার বেচে থাকাটা যে কত বড় মিরাকল তা না বল পারা যাবে না। সারা দুনিয়ার নিউজ মিডিয়াতে এটা এখন ব্রেকিং নিউজ। সবখানে। Reshma is the greatest survivor of all time. শুনেছি, বেজমেন্ট আর ২ তলার মাঝামাঝি কোন জায়গায় একটা বড় পকেটে সে ছিল আর কিছু খাবার দাবার পেয়েছিল আশেপাশে। এটাও শুনলাম, ওই জায়গায় একটা মসজিদও নাকি ছিল। রেশমার বেচে থাকা আসলে আমাদের আশার বানী। চিন্তা করে দেখুন, ১০৪৩ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়েছে, বেচে থাকার কোন আশাই আর ছিল না কারো, ঠিক তখনই রেশমা এসে জানিয়ে গেল আমরা যেন আশা না হারায়। এখনও অনেক কিছু আছে।
আর এই রেশমার বেচে থাকা নিয়ে এটিএন বাংলার মুন্নী সাহার সস্তা সাংবাদিকতাও দেখলাম। তার চিরচারিত অবান্তর প্রশ্নের ঝুলি। এমন সাংবাদিকতা কোথায় শিখেছে সে? তার উতপত্তি কোথা থেকে? সে তো আগে C গ্রেডের সাংবাদিক ছিল আর এখন, ধান্ধাবাজি করে হয়ে গেছে বড় সাংবাদিক! সাংবাদিকতার কিছু জানে কিনা সন্দেহ আছে। সাংবাদিকতার সে কলঙ্ক। রেশমাকে সে প্রশ্ন করে “কাপড় ছিল”? “খাবার কোথা থেকে আসছে”? “আসলেই তো” । এই ধরনের প্রশ্ন। চিন্তা করে দেখুন! এই ধরনের সাংবাদিকদের ঘাড় ধরে বাংলাদেশ থেকে বের করে দেয়া উচিত এবং এমন কোন সার্টিফিকেট দেয়া উচিত যাতে সে আর জীবনে কোথাও সাংবাদিকতা করতে না পারে। সে নিজেকে অনেক স্মাটর্ মনে করে, কিন্তু আদপে সে একটা ছাগল ছাড়া আর কিছু না। এবার সবাই মিলে পিটিশন করে মুন্নি সাহাকে নিষিদ্ধ করা উচিত।
মুন্নী সাহার প্রশ্নগুলো ছিল এমনঃ
১/ উনি এতোদিন পর কিভাবে বেচে আছেন?
২/ উনাকে এতো ফ্রেশ লাগছে কেন?
৩/ ১৭ দিন কোন খাবার ছাড়া কিভাবে উনি বেচে আছেন?
৪/ ওনার কাছে খাবার কোথা থেকে আসল?
৫/ উনার জামা কাপর গুলা এরকম নতুন মনে হচ্ছে, কোন ময়লা নেই কেন?
আজকের মিরাকল এবং আমার মনে হয়, এই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ অলৌকিক ঘটনা – রেশমার জীবিত বের হয়ে আসা রানা প্লাজার এই মৃত্যুপুরী থেকে। আমি এ নিয়ে ফেসবুকে নানা রকমের প্রতিক্রিয়া দেখছিলাম। তবে ৯০% ভাগ মানুষ আল্লাহর কাছে দোয়া চাইছে। আর নানা প্রপাগাণ্ডার মানুষ নানাভাবে ব্যাপারটা নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। হাস্যকর এসব পোস্টগুলো দেখতে দেখতে একেবারে অতি বিরক্ত। তবে রেশমার জন্য রইল মন থেকে অনেক দোয়া আর ভালবাসা। কি যুদ্ধই টা না সে করেছে। আর আমাদের মুন্নী সাহার প্রশ্নগুলো শুনেই মেজাজ্টা এতই খিচড়ে গিয়েছিল বলার মত না। অবশ্য তার কাছ থেকে এর চাইতে ভাল কিছু আশাও করা যায় না। তার আসল রুপ মোটামুটি সবাই জানে যারা একটু চোখ কান খোলা রাখে। সারা দুনিয়ার মিডিয়াগুলোতে এই মিরাকলের ঘটনা অনেক ফলাও করে প্রচার করছে এবং সম্পূনর্ পজিটিভ ওয়েতে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, রেশমা যে জীবিত বের হয়ে এসেছে এটাই তো অনেক বড় কথা! একটা মসজিদে সে আটকে ছিল। এটা খোদার অনেক বড় কুদরত ছাড়া আর কিছু না।
কিন্তু, এসবকে আজাইরা প্রশ্নবিদ্ধ করতে ওখানে মাইক ক্যামেরা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন আমাদের এটিএন বাংলার ইডিয়টিক রিপোটর্ার মুন্নী সাহা। নিজেকে সে সিএনএন বা বিবিসর সাংবাদিক ভাবা শুরু করেছিল হয়তো। তাই চরম ভাব নিয়ে সেই আহত, ক্লান্ত রেশমাকে জিজ্ঞেস করে বসল “আপনার অনুভুতি কি? আপনাকে এত ফ্রেশ লাগছে কেন”? ইত্যাদি ইত্যাদি। মুন্নীর আচরন যার পরনাই সবাইকে চরমভাবে বিরক্ত এবং বিব্রত করেছে। সবাই এই সস্তা সাংবাদিকের উপর এখন ক্ষেপে আছে। আসলে ঠিক জায়গায় ঠিক মানুষ না থাকলে যা হয় আর কি। মুন্নী নিজেকে বা এটিএন বাংলাকে একটু বেশী হাইলাইট করতে চেয়েছিল আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার, মাহফুজুর রহমানের আদর-আপ্যায়নে মুন্নী সাহা কিছু না হওয়া সত্তেও অনেক উপরের দিকে উঠেছিল। এবং এক পযর্ায়ে অনেক দুনর্াম কামিয়েছে। যা আমরা অনেকেই জানি। নিজেকে হাইলাইট করতে গিয়ে বেচারা মুন্নী আজ নিজেই বদনাম হয়ে গেল। তাকে এখন সবাই লাল কাডর্ দেখাচ্ছে।
আমাদের দেশে হলুদ সাংবাদিকতা অনেকটা ডাল-ভাতের মত ব্যাপার। আর এসব আমরা দেখেও না দেখার ভান করি। অবশ্য অনেকেই বুঝিও না কে কোন দিকে কি দাও মারছে। ব্যাপারটা হলো, আমাদের দেশের মানুষ জীবন ধারনের উপায় খুজতে এতই ব্যাস্ত থাকে এসব নিয়ে চিন্তা ভাবনার প্রয়াস পায় না। কারন, জীবন তো আগে। এর আগেও মুন্নী সাহা শাহবাগে কি চোট্পাট দেখাতে চেয়েছিল কিন্তু পোলাপাইনও ফাজিল কম না, ওখানেও তাকে ভালই পচানো হয়েছিল। সেই মুন্নী সাহা আজ একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলেছিল। এই ধরনের সাংবাদিকদের আসলে সাংবাদিকতা করার অধিকার হরন করা উচিত। তবে, এরা পার পেয়ে যাবে। কারন এরা তেল মারতে এবং তেল গায়ে লাগাতে ওস্তাদ। কাউকে না কাউকে পটিয়ে ঠিকই আবার নিজের সেই “ক্যারিয়ার” ঠিক করে ফেলবে। আমি জানিনা, মুন্নী সাহা আসলে কোন দলের কিনা বা কার সাথে কি করে, তার তেমন একটা গুরুত্বও আমার কাছে নেই – সস্তা টাইপের মানুষ সে। কিন্তু, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল পৃথিবীর ২/১ জন নামকরা সাংবাদিকের সাথে দুই লাইন কথা বলার, তাদের দেখেছি – সাংবাদিকতা পেশাটাকে তারা কতটা পবিত্র মনে করে। নিজেদের দায়িত্বের ব্যাপারে তারা সদা সচেতন। প্রফেশানালিজম তাদের প্রকট এবং ঠিক সময়ে ঠিক কাজটা করাই তাদের মুল লক্ষ্য আর আমাদের মুন্নি সাহার সাংবাদিকতার নামে ছাগলামি যারপরনাই আমাদের চরমভাবে বিব্রত করে এবং বিরক্তির জন্ম দেয়। এর মত মানুষেরা হঠাত করে সামান্য ক্ষমতা হাতে পেলে আর Abuse ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনা আর সে ক্ষমতা পেয়ে তারা নিজেদের সবচেয়ে বেশী ক্ষমতাবান মনে করে আর ভুলে যায় তাদের অতীত। আর ভুল মানুষের হাতে ক্ষমতা গেলে এবং ভুল পথে ক্ষমতা আসলে সেই ক্ষমতার মেয়াদ বেশীদিন থাকেনা। থাকতেও পারে না।
আজ, আমার মনে হয়, বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষ, অন্তত যারা অনলাইনে বিচরন করেন বা একটু খব্রাখবর রাখেন, তাদের বেশীরভাগই এই মুন্নী সাহাকে প্রচন্ড ভাবে ঘৃনা করে। সাংবাদিকতার আড়ালে মুন্নি সাহার হলুদ রুপ আজ নতুন করে আমাদের ভাবায় আসলে সাংবাদিকতা কি? মুন্নী সাহার মত সাংবাদিকেরা কোন জায়গায় কখন কি বলতে হয় এটা কি কখনও শেখেনি? শুধু কি তেল মারাই শিখেছে? প্রশ্নটা জাতির বিবেকের কাছে না, মুন্নী সাহা বা তাদের যারা উপরে তুলেছে তাদের কাছে – যদিও উনারা জবাব দিবে

No comments:

Post a Comment