গত ২৪ এপ্রিল, রানা প্লাজা ধসের
দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজে সাধারণ মানুষের স্বপ্রণোদিত অংশগ্রহণ ছিলো চোখে
পড়ার মতো। নিজের জীবন বিপন্ন করে তাঁরা বাঁচিয়ে দিয়েছে অনেক মানুষের
প্রাণ। এদেরই একজন অসম সাহসী বীর উদ্ধার কর্মী বাবু। পুরো নাম ওমর ফারুক
বাবু। নিজে উদ্ধার করেছেন অসংখ্য আহত নিহতদের। সাহসী এই উদ্ধারকর্মী ভবন
ধসের প্রথম দিনে একাই ৩০ জনের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। আজ তিনি নিজের নাম
লেখালেন লাশের কাতারে।
সাভারের রাজাসনের বাসিন্দা বাবু একজন
ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি। ভবন ধসের নির্মমতা ছুঁয়ে যায় বাবুকে। বিভৎস লাশগুলো
টেনে হিঁচরে বের করার পর মানসিক রোগে ভুগতে থাকেন তিনি। তাঁর স্ত্রীর কাছ
থেকে জানা যায়, দুর্ঘটনার পর থেকে বাবুর মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
তিনি আতঙ্কে ঘুমাতে পারেন না, মাঝেমধ্যে ভয়ে শিউরে ওঠেন। প্রতিদিন রাতে
ঘুমানোর পর গভীর রাতে ঘুমের মধ্যেই ‘বাঁচাও' বাঁচাও বলে আর্ত চিৎকার দিয়ে
জেগে উঠতেন।
বাবুর স্ত্রী আরো জানায়, পুরোপুরিভাবে
মানসিক ভারসাম্য হারানোর আগে তিনি চিৎকার করতেন 'আমি চলে আসছি আর সমস্যা
নেই আপনাদের কিচ্ছু হবেনা'।
এভাবেই তার স্বামী ওমর ফারুক বাবু আতঙ্কিত
হয়ে ক্রমেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে! এরপর তাকে ঢাকা
মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। কিন্তু মানুষের জন্য মানবতার গান গাওয়া এই
সাহসী বীর বাঁচতে পারলেন না। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রহস্যজনকভাবেই
মৃত্যু হয় তার।
সাভারের ধসে পড়া ভবনে স্বেচ্ছায়
উদ্ধারকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন এই সাহসী যুবক। চিকিৎসাধীন অবস্থায়
'নিখোঁজ হওয়ার' দু'দিন পর মঙ্গলবার তার লাশ পাওয়া গেছে। তিনি ঢাকা
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে ঢামেক
হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগের পাশের করিডোরে একটি ট্রলিতে বাবুর লাশ পাওয়া
যায়।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠান শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক সোহেল রানা।
মানুষের সাহাযার্থে ঝাঁপিয়ে পরা বাবুর
গ্রামের বাড়ী বরিশালের নলছিটির ষাইটপাখিয়া এলাকায়। চার ভাই ও দুই বোনের
মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।
অতি সাধারণ এই মানুষটি তাঁর কর্মের মাঝে
বীরের খেতাব লাভ করলেও মৃত্যুকে বরণ করে দিলেন অতি সাধারণ ও
অস্বাভাবিকভাবে। শহীদের সমমর্যাদার এই সত্যিকার দেশপ্রেমিক বাবু নিভৃতেই
খুব অসময়ে তাঁর জীবন প্রদীপ নিভিয়ে পাড়ি দিলেন অজানার পথে। বাবু এর আগেই
সংবাদে এসেছিলেন, তবে তখন তিনি ছিলেন এক বীরযোদ্ধা, আর এখন তিনি সংবাদে
আসলেন সাভার ট্র্যাজেডির বলি, আরো এক লাশ হয়ে।
উল্লেখ্য, গত ৪ মে শনিবার সাভার
ট্র্যাজেডির আরেক উদ্ধারকর্মী ইজাজ এক সপ্তাহ দগ্ধ শরীরে মৃত্যুর সাথে
পাঞ্জা লড়ে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এই মৃত্যুর শোক না
কাটতেই উদ্ধারকর্মীদের মর্মান্তিক মৃত্যুর কাতারে গত মঙ্গলবার, ৭ মে বাবুও
পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। সাভার সহ সমগ্র দেশ জুড়ে এই বীরেদের মৃত্যুতে
নেমে এসেছে হাহাকার।
No comments:
Post a Comment