ভিক্টোরিয়া নামের এই শিক্ষক নিজের জীবন দিলেন আর বাঁচিয়ে গেলেন ফুলের মতন শিশুদের। তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আর ওই ইবলিশ যে বিখ্যাত হতে চায় বিভৎসতার মধ্য দিয়ে তার প্রতি ঘৃণা।
ভিক্টোরিয়ার মতন একজন মানুষ সুন্দর একটি পরিবার থেকেই আসতে পারে আর অসুস্থ পরিবার তৈরী করে হত্যাকারী খুনি অমানবিক মানুষ।
প্রতিটি অভিভাবক একজন মানবিক মানুষ গড়ার শিক্ষক। শিশুর জন্মদান শুরুর প্রক্রিয়া থেকে তাদের শিক্ষকতার কাজ অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে ভালোবাসার মাধ্যমে করা উচিৎ। শুধু বাচ্চার জন্ম দিয়ে পিতা মাতা হলেই হলো না। অনেকে আবার মনে করেন বাচ্চা দেখাশোনার কাজ কেবল মা করবে। এটাও ভুল ধারনা। বাবার যথেষ্ট দায়িত্ব থাকে একটি বাচ্চার জন্য।
আপনার বাচ্চা কে যদি জিজ্ঞেস করেন। তুমি কাকে বেশী ভালোবাস বাবাকে না মাকে? বাচ্চার মনের উপর ভীষণ রকম চাপ পরার মতন একটি প্রশ্ন। বাচ্চা কিছুতেই বলতে চায় না। কাকে বেশী ভালোবাসে কিন্তু জোর করে কথাটা শুনতে ইচ্ছুক বাবা বা মা। আমাকে একটু বেশী ভালোবাসুক অন্যজনের চেয়ে এমনটা চান। আমরা খুব আমিকে পছন্দ করি। আমার সব কিছু অনেক ভালো, সবার উপরে। এই ভাবনায় বাচ্চাকে আমাদের নিজেস্ব সম্পত্তি ভাবি। সে একটা আলাদা ব্যাক্তি। নিজের সন্তান আপন ইচ্ছা অনিচ্ছার 'আমি' এটা ভাবতে বা মানতে বড় কষ্ট হয়। মানি না, জানিও না অনেক সময়।
কিছু হলেই ইচ্ছে মতন বকা মার দিতে এতটুকু কাপর্ণ্য করা হয় না। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন। কতটা প্রভাব এতে বাচ্চার মনের উপর পরে। নিজের ছোটবেলার কথা ভেবে দেখুন। উন্নত দেশগুলোতে বাচ্চাকে না মারার জন্য আইন আছে। অনুন্নত দেশের অভিভাবক উন্নত দেশে এসে নানা রকম বিপত্তির মধ্যে পরেন নিজের সন্তানকে মারার কারণে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় অনেক সময়। জেলে থাকতে হয়। বাচ্চারা জানে তাদের সাহায্যের জন্য স্কুলে শিক্ষককে বলতে পারে বা জরুরী বিভাগে ফোন করে সাহায্য পেতে পারে।
তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চারা সহ্য করে যায় বাবা মা এর বকাঝকা, মার। বাবা মার বিরুদ্ধে সচরাচর তারা নালিশ করতে চায় না। এটা খুব ভেবে চিন্তে তারা করে না, তাদের ছোট্ট মনে কিভাবে যেন এই অনুভুতির জন্ম হয় তারা বাবা মাকে ভালবাসে। কিন্তু অনেক সময় বাচ্চার গায়ে মারের দাগ দেখে শিক্ষক বাচ্চার কাছ থেকে জানার চেষ্টা করেন।
তবে ছোট মনে প্রতিক্রিয়া গুলো জমতে থাকে পলির পরে পলি পরে। তারা সুযোগ পেলে নিজেদের উপর অত্যাচারের প্রতিফলন ঘটায় ছোট ভাই বোন থেকে কাজের লোক যারা চিরকাল অবহেলিত তাদের থেকে বন্ধুবান্ধবের উপর ধীরে ধীরে স্বভাবটা মজ্জাগত হয়ে উঠে বিস্তার বাড়তে থাকে অত্যাচার করার।
যদি অভিবাবক সঠিক ভাবে সঠিক সময়ে সেদিকে নজর না দেন।
বাবা মা দুজন যখন ঝগড়া করেন। তার এক বিশাল প্রতিক্রিয়াও বাচ্চাদের মনজগতে বাসা বাঁধে। তারা অসহায় হয়ে উঠে মনে মনে। এবং নিজেরাও অবচেতন ভাবে ঝগড়া করার বিষয়টি শিখে যায়।
মনের মধ্যে পরিসুদ্ধ হওয়ার মানবিক ফিলটার সব সময় মানুষ হওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যায় কিন্তু পরিবেশের প্রভাব সেই পরিশুদ্ধিকরণ প্রথা অকেজো করে ফেলে। ভয়ংকর বিভৎস চিন্তায় নিমজ্জিত করে ফেলে। যার ফলে এক সময় তার প্রকাশ হয় ভয়াবহ ভাবে। আর ভালোবেসে বাচ্চাদের হাতে যুদ্ধ খেলা (ফাইটিং গেইম), বন্দুক ইত্যাদি তুলে দিয়েও তাদের ভয়ঙ্কর হওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়া হয় অবচেতন ভাবে অনেক সময়।
আপনার বাচ্চাকে কি প্রচলিত প্রথার গড্ডালিকায় ভেসে যেতে দিবেন নাকি তাকে সুস্থতার চিন্তা চেতনার বিকাশ হওয়ার সুযোগ দিবেন। তা বাচ্চা জন্ম দেয়ার আগেই ভাবুন। নয়তো শুধু বাবা মা হওয়ার জন্য বাচ্চা জন্ম না দেয়াই ভালো।
গতরাতেই আমরা কিছু বন্ধ যখন কথা বলছিলাম তখন জানলাম প্রতিবেশী একটি পরিবারের কথা। বৃদ্ধলোকটি অসহায় একা হয়ে আছে কিন্তু তার জীবনে বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে পরিবারের মানুষের দেয়া দূর্যোগ। সে সুন্দর একটি পরিবার গড়তে পারে নাই। একটি মেয়ে যে দুটি অবুঝ বাচ্চাকে মেরে নিজেকে গুলি করে মেরে ফেলে। তার জীবনে ছিল ছোটবেলা মাকে এমন ভাবে মৃত্যু বরণ করতে দেখার ভয়াবহ স্মৃতি।
যে বাচ্চাগুলো শিক্ষকের মৃত্যু দেখল ক্লোজটে লুকিয়ে থেকে তাদের সারা জীবনের জন্য স্কুল এক আতংকের জায়গা হয়ে রইল। এই স্মৃতি কাটানোর জন্য মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন পরতে পারে অনেকের। প্রয়োজন ভালোবাসায় ভুলিয়ে আতংক দূর করার চেষ্টা নিতে হবে অভিভাবকদের।
আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমার ছোটবোনটা আমার অনেক ছোট। ওর জীবনে শিক্ষা চেতনা বিকাশের এক বিরাট ভূমিকা আমার। না জেনেই আমি সে দ্বায়িত্ব পালন করেছিলাম সে সময় ছোট পুতুলের মতন শিখতে চাওয়া মানুষটাকে শিখানোর আনন্দে। পরে জেনেছি বই পড়ে বাচ্চারা শিখে ফেলে পাঁচ বছর পর্যন্ত অনেক দ্রুত সব কিছু। তাইতো বিরাট কবিতা ইংলিশ বাংলা সে শিখে ফেলেছিল কথা বলার সাথেই আর আগ্রহ জন্মে গিয়েছিল শিখার যা এখনও তেমনি আটুট আছে। আবার প্রচণ্ড সাহসী ছোট্ মেয়েটার মনে একটা আতংক আমি ঢুকিয়ে দিয়েছি না জেনে সেই ছোট বয়সে।
বারবার দৌড়ে চলে যেত ছোট ছোট পায়ে যেখানে সেখানে। আমি তাকে ভয় দেখালাম ওখানে যাস না। মাকড়শা আসবে। সেই যে মাকড়শা ভীতি ওর মাঝে ঢুকে গেল। অনেক কিছু বেশী বুঝলেও মাকড়শা ভীতি আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
তাই বাচ্চাদের মনে কখন কোনটার প্রভাব কিভাবে পরে সেদিকে প্রখর খেয়াল রাখা দরকার অভিবাবকের।
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে সব বাচ্চারা অযত্নে অবহেলায় বড় হয় তাদের মধ্যে নানান রকম বিকৃত মনোভাব। অন্য বাচ্চাদের অবদমন করার চেষ্টা, রাগ, বদরাগ, বা অবদমিত প্রতিহিংসা নিয়ে বড় হয়।
বাচ্চাদের ভালোবাসা মানে বাচ্চাদের খেলনা, কাপড়, খাওয়া যখন যা চাইল তা দিয়ে স্পয়েলড করাটাও ঠিক না আপনার আছে বলেই। অনেক অভিভাবক আবার আছে বলে দেখানোর জন্য বা না বুঝেই এমন অনেক কিছু দিয়ে বাচ্চাদের মাথায় বড়াই অহংবোধ ঢুকিয়ে দেন।
আপনি যখন গল্প করছেন বন্ধুর সাথে বা অন্য কারো সাথে দেখবেন বাচ্চা অনেক বেশী তখন আপনাকে ডাকছে। আপনি বলবেন বড্ড বিরক্ত করছে। সে কিন্তু আসলে অসহায় অনুভব করছে আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। বাচ্চা বড় করে তুলার সময়টায় নিজের অনেক বিষয় আসলে বাদ দিয়ে বাচ্চার জন্য সময় করতে হবে। অনেকে আবার টিভি চালিয়ে দিয়ে বাচ্চা বসিয়ে রাখেন সেই ছবি মনে কি প্রতিক্রিয়া করছে তার খবর নিয়ে দেখেছেন?
সবচেয়ে বড় কথা হলো আপনি যাই করুন বাচ্চাদের জন্য সময় বের করুন। তাদের সাথে নানান বিষয়ে কথা বলুন। বাচ্চাদের অসংখ্য কৌতুহলগুলো ভালোবাসা দিয়ে মিটান। গল্প বলেন। ইতিহাস, সংস্কৃতি, পৃথিবী নিয়ে তাদের জ্ঞানের সীমা বাড়িয়ে দেন যেন তারা মানবতায় ভালোবাসায় মানবিক হয়ে উঠতে পারে। যতদিন সম্ভব বাচ্চার সাথে সময় কাটান তাদের মানুষ করে তুলতে। এক সময় সময়ের প্রয়োজনে তারা দূরে চলে যাবে কিন্তু আপনার ভালোবাসা তাদের ঠিক আপনার কাছে রাখবে আর তাদের সফলতা আপনাকে দিবে আনন্দ্। হবেন সার্থক পিতামাতা।
No comments:
Post a Comment