তিনি বি.এ. পাশ করলে হয়ত পরিবারের জন বড় কিছু হতেন। বি. এ. ফেল করে সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করলেন। আর সমগ্র জাতির জন্য অমর এক প্রবাদ পুরুষ হয়ে গেলেন। “ওকি গাড়িয়াল ভাই / হাঁকাও গাড়ি তুই চিল মারির বন্দর এ রে”। এই একটা গানের লাইনে অখ্যাত এক চিল মারির বন্দরকে কোটি কোটি মানুষের মনে বিখ্যাত করে দিলেন। তিনি বাংলার অমর শিল্পী আব্বাদউদ্দীন আহমদ। জন্ম ১৯০১ সালের ২৭ অক্টোবর পশ্চমিবঙ্গের কুচবহিার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুর গ্রামে। পিতা মোঃ জাফর আলী আহমদ ছিলেন আইনজীবী। মায়ের নাম হীরামন নেসা।
পাখীকে গাইতে দেখে তারও গাইতে ইচ্ছে হতো। বাড়ীর পাশে ছিল কালজানি নদী। মাঠে কৃষকেরা দিনরাত কাজের ফাঁকে ফাঁকে গাইতো ভাওয়াইয়া গান। প্রথাগত গানের শিক্ষা বলতে তেমন নেই তাঁর। গানের ওস্তাত বলতে মাঠের সেই কৃষকেরা আর পাখপাখালীর গান।
১৯৩০ সালে প্রথম গানের রেকর্ড বের হয় তার। ‘কোনো বিরহীর নয়নজলে’ এবং ‘স্মরণপারের ওগো প্রিয়' এই দুটি গানই ছিল আধুনিক ধাচের গান। কলের গান শুনে শুনে গান গাইলে যা হয় তাই হলো। স্বকীয়তা বলতে সে গানে কিছুই ছিল না। একদিন কৃষ্ণচন্দ্র দে’র একটি গান নকল করে গাইছিলেন আব্বাসউদ্দীন। কাজী নজরুল ইসলাম পিছনে এসে দাড়িয়ে ছিলেন কখন তা টের পাননি। নজরুল তখন ডেকে বল্লেন - ‘আব্বাস, চোখ তোমার অন্ধ হয়নি বরং চশমা পর্যন্ত এখনও নাওনি। কাজেই সেদিক থেকে তুমি কানা-কেষ্ট নও। তারপর ওঁর গলায় নকল করে গান গাইলে জীবনভর তোমাকে এই অপবাদের বোঝা মাথায় নিয়ে বেড়াতে হবে যে ‘আব্বাস! ও তো কেষ্টবাবুর নকল!’ এই কথাগুলো ধাক্কার মত লাগলো বুকে। তিনি তখনই ঠিক করলেন তার নিজস্বতা দরকার। আর সেই নিজস্বতার পথ হিসাবে খুঁজে নিলেন আজন্ম বয়ে চলা গ্রাম বাংলার সুরকে। সঙ্গে পেলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কবি জসিমউদ্দীন, কিব গোলাম মোস্তফার মত অসীম প্রতিভাধর সৈনিকদের।
তখনকার রেকর্ড কোম্পানীর ম্যানেজার ভগবতী বাবু আব্বাসউদ্দীনের পল্লীগানের আবেদনে সাড়া দিলেন না। পরে ঠিক হলো পল্লীর সুরে রেকর্ড বের করা যাবে কিন্তু শব্দগুলো হবে আধুনিক। আর শব্দ চয়নের ভার দেয়া হলো কাজী নজরুল ইসলামকে। গান বের হলো, ‘নদীর নাম সে অঞ্জনা’ এবং ‘পদ্ম দিঘীর ধারে ধারে’। ১৯৩২ সালে বের হওয়া সে রেকর্ডের উপরে লেখা গলো গ্রাম্যসঙ্গীত। কলকাতার তখন আশি ভাগ মানুষেরই মূল বাড়ী পল্লী অঞ্চলে। তাই রাস্তায় মানুষজন থেমে গেল সেই সুর ও কথা শুনে। সবাই অবাক হয়ে ভাবলো, নাড়ীতে টান মারা সেই সুরে কে কথা কয়! অসম্ভব সফলতার মুখ দেখলো এই রেকর্ড। পরে গ্রামের সহজ সরল শব্দে রেকর্ড বের হলো - ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে’ এবং ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’। এই রেকর্ডের উপর লেখা হলো ‘শিক্ষিত কবির কাব্যে যখন পড়ি, ‘এ পারে চক্রবাক ওপারে চক্রবাকী, মাঝেতে বহে বিরহিণী। তখন মনের আগে বুদ্ধি দিয়ে আমরা রস উপলব্ধি করি। কিন্তু অশিক্ষিত কবির গানে যখন দেখি ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে’ আর বিরহিণী বগীর মর্মব্যথায় সারা আকাশ ছলছল! তখন আর বুদ্ধি প্রয়োগের দরকার হয় না। বিরহের এই অতি সহজ প্রকাশভঙ্গি তীরের মতো সোজা এসে মানুষের মর্মে বেঁধে।’ এইসব গানের জনপ্রিয়তা ভেঙ্গে দিল আগের সব জনপ্রিয়তার রেকর্ড!
আব্বাসউদ্দীনের অনুরোধে কাজী নজরুল লিখেন ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে’ গানটি। এবং নিজের কন্ঠে তা তুলেও নিলেন। এই রেকর্ড বের হবার মাত্র দুই মাস পর ছিল রোজার ঈদ। হিন্দু মুসলিম সবাই মুগ্ধ হয়ে গেল সেই গানে। একে একে অনেক অনেক ইসলামী গান লিখলেন নজরুল, গাইলেন আব্বাসউদ্দীন।
তিনি চারটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। দীর্ঘদিন পক্ষাঘাত রোগ ভোগের পর ১৯৫৯ সালের ৩০ এ ডিসেম্বর সকাল ৭ টা ২০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাসটি ত্যাগ করেন। বাংলা ভাষা যতদিন থাকবে এই শ্রদ্ধেয় শিল্পী ততদিন অন্তত অমর থাকবেন।
পাখীকে গাইতে দেখে তারও গাইতে ইচ্ছে হতো। বাড়ীর পাশে ছিল কালজানি নদী। মাঠে কৃষকেরা দিনরাত কাজের ফাঁকে ফাঁকে গাইতো ভাওয়াইয়া গান। প্রথাগত গানের শিক্ষা বলতে তেমন নেই তাঁর। গানের ওস্তাত বলতে মাঠের সেই কৃষকেরা আর পাখপাখালীর গান।
১৯৩০ সালে প্রথম গানের রেকর্ড বের হয় তার। ‘কোনো বিরহীর নয়নজলে’ এবং ‘স্মরণপারের ওগো প্রিয়' এই দুটি গানই ছিল আধুনিক ধাচের গান। কলের গান শুনে শুনে গান গাইলে যা হয় তাই হলো। স্বকীয়তা বলতে সে গানে কিছুই ছিল না। একদিন কৃষ্ণচন্দ্র দে’র একটি গান নকল করে গাইছিলেন আব্বাসউদ্দীন। কাজী নজরুল ইসলাম পিছনে এসে দাড়িয়ে ছিলেন কখন তা টের পাননি। নজরুল তখন ডেকে বল্লেন - ‘আব্বাস, চোখ তোমার অন্ধ হয়নি বরং চশমা পর্যন্ত এখনও নাওনি। কাজেই সেদিক থেকে তুমি কানা-কেষ্ট নও। তারপর ওঁর গলায় নকল করে গান গাইলে জীবনভর তোমাকে এই অপবাদের বোঝা মাথায় নিয়ে বেড়াতে হবে যে ‘আব্বাস! ও তো কেষ্টবাবুর নকল!’ এই কথাগুলো ধাক্কার মত লাগলো বুকে। তিনি তখনই ঠিক করলেন তার নিজস্বতা দরকার। আর সেই নিজস্বতার পথ হিসাবে খুঁজে নিলেন আজন্ম বয়ে চলা গ্রাম বাংলার সুরকে। সঙ্গে পেলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কবি জসিমউদ্দীন, কিব গোলাম মোস্তফার মত অসীম প্রতিভাধর সৈনিকদের।
তখনকার রেকর্ড কোম্পানীর ম্যানেজার ভগবতী বাবু আব্বাসউদ্দীনের পল্লীগানের আবেদনে সাড়া দিলেন না। পরে ঠিক হলো পল্লীর সুরে রেকর্ড বের করা যাবে কিন্তু শব্দগুলো হবে আধুনিক। আর শব্দ চয়নের ভার দেয়া হলো কাজী নজরুল ইসলামকে। গান বের হলো, ‘নদীর নাম সে অঞ্জনা’ এবং ‘পদ্ম দিঘীর ধারে ধারে’। ১৯৩২ সালে বের হওয়া সে রেকর্ডের উপরে লেখা গলো গ্রাম্যসঙ্গীত। কলকাতার তখন আশি ভাগ মানুষেরই মূল বাড়ী পল্লী অঞ্চলে। তাই রাস্তায় মানুষজন থেমে গেল সেই সুর ও কথা শুনে। সবাই অবাক হয়ে ভাবলো, নাড়ীতে টান মারা সেই সুরে কে কথা কয়! অসম্ভব সফলতার মুখ দেখলো এই রেকর্ড। পরে গ্রামের সহজ সরল শব্দে রেকর্ড বের হলো - ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে’ এবং ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’। এই রেকর্ডের উপর লেখা হলো ‘শিক্ষিত কবির কাব্যে যখন পড়ি, ‘এ পারে চক্রবাক ওপারে চক্রবাকী, মাঝেতে বহে বিরহিণী। তখন মনের আগে বুদ্ধি দিয়ে আমরা রস উপলব্ধি করি। কিন্তু অশিক্ষিত কবির গানে যখন দেখি ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে’ আর বিরহিণী বগীর মর্মব্যথায় সারা আকাশ ছলছল! তখন আর বুদ্ধি প্রয়োগের দরকার হয় না। বিরহের এই অতি সহজ প্রকাশভঙ্গি তীরের মতো সোজা এসে মানুষের মর্মে বেঁধে।’ এইসব গানের জনপ্রিয়তা ভেঙ্গে দিল আগের সব জনপ্রিয়তার রেকর্ড!
আব্বাসউদ্দীনের অনুরোধে কাজী নজরুল লিখেন ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে’ গানটি। এবং নিজের কন্ঠে তা তুলেও নিলেন। এই রেকর্ড বের হবার মাত্র দুই মাস পর ছিল রোজার ঈদ। হিন্দু মুসলিম সবাই মুগ্ধ হয়ে গেল সেই গানে। একে একে অনেক অনেক ইসলামী গান লিখলেন নজরুল, গাইলেন আব্বাসউদ্দীন।
তিনি চারটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। দীর্ঘদিন পক্ষাঘাত রোগ ভোগের পর ১৯৫৯ সালের ৩০ এ ডিসেম্বর সকাল ৭ টা ২০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাসটি ত্যাগ করেন। বাংলা ভাষা যতদিন থাকবে এই শ্রদ্ধেয় শিল্পী ততদিন অন্তত অমর থাকবেন।
No comments:
Post a Comment