Wednesday, December 5, 2012

পশু-পাখি থেকে বছরে তিন রোগের সংক্রমণ


প্রতিবছর পশু-পাখি থেকে গড়ে তিনটি নতুন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এসব রোগ সংক্রমণের জন্য দায়ী ভূমি ব্যবহারে ব্যাপক পরিবর্তন, শিল্পের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, নতুন পদ্ধতিতে পশুসম্পদ ব্যবস্থাপনা।
প্রভাবশালী স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট এ তথ্য দিয়েছে। এতে বলা হয়, গত ৭২ বছরে মানুষ প্রায় ৪০০ নতুন সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে। এসব ব্যাধির ৬০ শতাংশের উৎস পশু বা পাখি। মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত একটি জীবাণু সম্পর্কেও বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেননি।
১ ডিসেম্বর পশু-পাখি থেকে মানুষের রোগ সংক্রমণ নিয়ে তিনটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ করে দ্য ল্যানসেট। এতে বলা হয়, পশু-পাখি থেকে আসা রোগে প্রতিবছর কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে আর লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে আছে অ্যানথ্রাক্স, টোক্সোপ্লাজমোসিস, ব্রুসেলোসিস, র্যা বিস, কিউ ফিবার, চ্যাগাস ডিজিজ, রিফট ভ্যালি ফিবার, সিভিয়ার অ্যাকুইট পেরপ্রেটরি সিনড্রম (সার্স), ইবোলা হেমোরোজিক ফিবার, নেইল ভাইরাস, চিকুনগুনিয়া, এইচআইভি, নিপাহ ভাইরাস, এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা, সোয়াইন ফ্লু।
বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্স, এইচআইভি, নিপাহ ভাইরাস, এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা, সোয়াইন ফ্লু, চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত মানুষও রয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ল্যানসেট-এর এসব গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে রোগজীবাণুর ওপর নজরদারি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, একক স্বাস্থ্যব্যবস্থার (ওয়ান হেলথ) ধারণাকে এগিয়ে নিতে হবে। এই ধারণায় মানুষের স্বাস্থ্য, পশু-পাখির স্বাস্থ্য ও পরিবেশকে অবিচ্ছিন্নভাবে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, অ্যানথ্রাক্স পশুর রোগ। কিন্তু মানুষও এতে আক্রান্ত হয়, এ দেশেও হচ্ছে। এই রোগ প্রতিরোধে গবাদিপশুকে টিকা দিতে হবে।
ল্যানসেট বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন উজাড়, নতুন বন সৃজন ও খণ্ড খণ্ডভাবে আবাসন গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় ‘লাইম ডিজিজ’-এর প্রকোপ বেড়েছে বা কমেছে। বিজ্ঞানীরা ওই অঞ্চলের দীর্ঘ ইতিহাস ঘেঁটে এই যোগসূত্র পেয়েছেন।
সাময়িকীতে বলা হয়েছে, পশুসম্পদ ও হাঁস-মুরগির খামারের উন্নতি স্বাস্থ্যের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং নতুন রোগজীবাণু সংক্রমণের সুযোগ তৈরি করেছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নীতিশ দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, গত দুই দশকে পোলট্রি-শিল্পের প্রবৃদ্ধি ২০০ শতাংশের বেশি হয়েছে। আগে যে জায়গায় ১০ জন মানুষের পাশাপাশি ১০টি মুরগি থাকত, এখন সেখানে ১৫ জনের সঙ্গে ১০ হাজার মুরগি থাকছে। প্রতিবেশে পরিবর্তন এসেছে। মানুষ সহজে মুরগির রোগের সংস্পর্শে আসছে।
দ্য ল্যানসেট বলছে, মাংস, ডিম, দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যের মাধ্যমে পশুররোগ মানুষের শরীরে ঢোকে। পৃথিবীব্যাপী বহু ধরনের গৃহপালিত ও বন্য মেরুদণ্ডী বা অমেরুদণ্ডী প্রাণী মানুষের খাদ্য। এসব প্রাণীর মাংসে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক থাকে। কিন্তু খাদ্যের ভেতরে থাকা রোগজীবাণু সম্পর্কে ধারণা এখন পর্যন্ত বেশ কম। তাই হঠাৎ কোনো নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তার উৎস খোঁজা এবং রোগতত্ত্ব বোঝা কঠিন হয়।
কিছু জীবাণু সংক্রমণের পরও একটি এলাকায় সীমাবদ্ধ থেকেছে। আবার আধুনিক যাতায়াতব্যবস্থা ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের কারণে কিছু জীবাণু দ্রুত বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।
নীতিশ দেবনাথ বলেন, আগে সমুদ্রপথে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে ছয় মাস বা তারও বেশি সময় লাগত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রোগে আক্রান্ত মানুষ ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে পৌঁছাতে পারে। তার মাধ্যমে অন্য মানুষ সংক্রমিত হতে পারে।

No comments:

Post a Comment