Tuesday, December 25, 2012

খিলগাঁও রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ‘কখন আসবে মা?


খিলগাঁওয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত আতিকা সুলতানা। গতকাল ঢাকা মেডিকেল থেকে তোলা ছবি
খিলগাঁওয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত আতিকা সুলতানা। গতকাল ঢাকা মেডিকেল থেকে তোলা ছবি
প্রথম আলো
সারা মুখে জখম। পিঠ, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায়ও ক্ষত। যন্ত্রণা নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কুঁকড়ে আছে ছয় বছরের শিশু আতিকা সুলতানা। তার দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদছেন বাবা খন্দকার কে এম রিপন। দুর্ঘটনায় স্ত্রী নিহত ও সন্তানেরা আহত হওয়ার পর গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে জামিনে কারাগার থেকে বের হয়েছেন রিপন।
কারাগার থেকে বের হয়েই ছুটে গেছেন হাসপাতালে। মেয়ের করুণ অবস্থা দেখে রিপন ফেটে পড়েন কান্নায়। কেঁদেছে আতিকাও। কিছুক্ষণ পর বাবার প্রতি আতিকার আকুতি—‘মা কখন আসবে? আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে চলো।’ আতিকা জানে না, তার মা চলে গেছে না ফেরার দেশে। 
গত শুক্রবার সকালে মা রত্না আক্তারের সঙ্গে বাবা রিপনকে দেখতেই কারাগারের উদ্দেশে রিকশাযোগে যাচ্ছিল আতিকা। সঙ্গে ছিল ভাই আশফাক খন্দকার রিফাত (১৪)। ওই রিকশাসহ কয়েকটি যানবাহন উঠে পড়ে খিলগাঁও রেলক্রসিংয়ের রেললাইনে। ঢাকা থেকে লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন ওই যানবাহনগুলোকে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনায় মারা যান রত্না। আশফাককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও আতিকাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।
রিপন বলেন, ‘আমার স্ত্রী ধার্মিক ছিলেন। আমি তার কবরে একটু মাটিও দিতে পারলাম না।’
হাসপাতালে মেয়ের পাশে আধা ঘণ্টা থেকে আরামবাগে চলে যান রিপন। সেখানে ফুফুর বাসায় আছেন তাঁর ছেলে আশফাক। সেখানেও সৃষ্টি হয় আবেগঘন মুহূর্ত। 
রিপন বলেন, ‘আমি একসময় ছাত্ররাজনীতি করতাম। বর্তমানে তেমন সক্রিয় নই। সম্প্রতি খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ার বাসাটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি বলে ১০ ডিসেম্বর আমি শান্তিনগর এলাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে একটি চাকরির ব্যাপারেও একজনের সঙ্গে দেখা করতে যাই। রিপন বলেন, চাকরির ব্যাপারে বিএনপির পার্টি অফিসের পাশে ভিক্টোরিয়া হোটেল থেকে বের হওয়ার পর পল্টন থানার পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে। আমি কারাগারে পত্রিকায় পড়ে দুর্ঘটনার সংবাদ পাই। প্যারোলে মুক্তির চেষ্টাও করা হয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জামিনে কারাগার থেকে বের হই।’
জানতে চাইলে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ার বলেন, ওই দিন পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েকজন ইটপাটকেল ছুড়েছিল। ওই সময় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রিপনও তাঁদের একজন হতে পারেন।

No comments:

Post a Comment